খোশ-আমদেদ “ইসলাম প্রতিদিন”
পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় মাস। এটি শুধু সংযম ও রোজা রাখার মাসই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের এক মহাসুযোগ। এ মাসেই আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য অশেষ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন।
রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—
“রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশক এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সূরা বাকারা: ১৮৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৪)
রমজানকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে—
১. প্রথম দশক: রহমতের সময়, যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন।
২. দ্বিতীয় দশক: মাগফিরাতের সময়, যখন আল্লাহ গুনাহ ক্ষমা করেন।
৩. শেষ দশক: নাজাতের সময়, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
পবিত্র রমজানের বিশেষ ইবাদতঃ রমজান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি ইবাদত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
রোজা রাখা: সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও কু-প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকা।
তারাবির নামাজ: এশার নামাজের পর বিশেষ এই নামাজ আদায় করা হয়।
এত্তেকাফ: শেষ দশকে মসজিদে থেকে একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা।
কুরআন তিলাওয়াত: এ মাসেই কুরআন নাজিল হয়েছে, তাই বেশি বেশি কুরআন পড়া ও তা অনুধাবন করা উচিত।
লাইলাতুল কদর: এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।
রমজানের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। আল্লাহ বলেন—
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাকারা: ১৮৩)
রমজানের প্রকৃত শিক্ষা হলো ধৈর্য, সংযম ও আত্মসংস্কার। এ মাসে আমরা ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারি, যা আমাদের দানশীলতা ও মানবিকতাকে বাড়িয়ে তোলে।
রমজান শুধু একটি মাস নয়, বরং এটি এক মহান প্রশিক্ষণের সময়, যা আমাদের আত্মাকে পবিত্র করে, আল্লাহর কাছে আরও বেশি নিবেদিত হতে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত এ মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের পূর্ণ ফজিলত ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।