অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়তে পুলিশ বাহিনীকে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে হবে। পুলিশ আগে খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিল, এখন পুলিশকে আলোময় বাংলাদেশ গড়তে ভ‚মিকা পালন করতে হবে।”
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আইন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারি, শৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, সব যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। আইন না থাকলে সরকার, গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার কিছুই থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটা সম্ভাবনার দেশ। সেটাকে আমরা বাস্তবতায় নিতে পারিনি। নতুন করে দেশ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে। এই সম্ভাবনাকে যেন আমরা হেলায় না হারাই। যারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন দেশের পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের।”
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ফারজানা ইসলাম।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পুলিশকে এখন দেখলে মানুষ ভয় পায়। পুলিশ হবে বন্ধু। পুলিশ হবে আশ্রয়দাতা। এই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অতীতের সব কথা মানুষ ভুলে যাবে। তিনি বলেন, ‘কাজেই এটা নিয়ে কান্নাকাটি করে লাভ নাই। কারণ সেই ১৬ বছরের ইতিহাস আমরা বদলাতে পারবো না। ১৬ বছরে কালিমা সারা গায়ে মাখা আছে। রাতারাতি আমি পাল্টাতে পারবো না।’
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মানুষ হিসেবে নিজেকে পাল্টাতে পারি, ভাবমূর্তি নতুন আমি তৈরি করতে পারি। যেই সরকার তোমাদের নিয়ে কাজ করছে, সেই সরকারের ইচ্ছা সেই ভাবমূর্তি নিয়ে ফিরে আসো। যাতে করে মানুষ দেখে বলে, শুধু পুলিশ বাহিনী না, নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী। দেখলে যেন মনে হয়, এই পুলিশ নতুন বাংলাদেশের পুলিশ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারীদেরকে আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। এটা অনেক বড় কাজ। আমাদের অবহেলার কারণে সমাজে এটা দ্রæত বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের দেশের অর্ধেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কেউ নাই। রাস্তাঘাটে চলতে ভয় পায়। এটা কোন ধরনের কথা! তাদের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের আইনি দায়িত্ব। নিজ নিজ এলাকায় সেটি করতে হবে। কোথাও যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে বহু সম্ভাবনার এই দেশ এখানেই শেষ হয়ে যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এমন একটা ভ‚মিকায় আছি সেখানে দেশের একটা পরিবর্তন হবে। নতুন বাংলাদেশ কথাটা আমরা বলি, কারণ পুরনো বাংলাদেশ একটা অন্ধকার যুগ। ভয়ংকর একটা যুগ। সেই ভয়ংকর একটা দিন থেকে সুন্দর ঝলমলে একটা দিনে আসতে চাই। সেটা হলো নতুন বাংলাদেশ। পুলিশ বাহিনীর সমস্যা হচ্ছে ওই অন্ধকার যুগে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিল। নিজের ইচ্ছায় নয়, সরকারি হুকুম পেয়েছে কাজ করেছে। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে তোমাদেরকে ওই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে (পুলিশ) অনেক দোষ দেয়, আমরা দেখিয়ে দেবোÑ আমরা মানুষ খারাপ না। আমরা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম। সেই খারাপ মানুষ থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমরা ভালো মানুষ। আমরা দেখো কী করতে পারি। সেই দৃঢ় চিন্তা মাথার মধ্যে রাখতে হবে যে, আমরা দেখিয়ে দেবো। নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে আমরা এখানে বড় একটা ভ‚মিকা পালন করবো, কারণ আমাদের কাছে আছে আইন এবং শৃঙ্খলা। এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে পরিবেশটা সৃষ্টি হয়, যেখান থেকে দেশ উড়াল দেবে।