অনলাইন ডেক্স : শেখ হাসিনাকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপরে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেছেন
রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার দুপুরে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম
মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “ভারত তাকে (শেখ হাসিনা) আশ্রয় দিয়েছে, সেটা দিতে পারে।
কিন্তু তাকে ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া যে, সে বলবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। পার্শ্ববর্তী দেশ
থেকে উনি উস্কানি দিচ্ছেন, একটা অরাজকতা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং
তাকে সাপোর্ট করছে ভারতের পলিসিমেকাররা। এটা অদ্ভুত ব্যাপার।
“এটা তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ, ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ।
একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ওপর আরেকটি রাষ্ট্রের এরকম অবস্থান, চরমভাবে
আন্তর্জাতিক রীতিনীতি সমস্ত কিছু লঙ্ঘন করে এই কাজটা করছে।”
৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই
আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার রাতে তিনি একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন, যা সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। ভারতে বসে শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণ
দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই রাতেই ঢাকায় ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে ধানমন্ডি ৩২
নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডিতে শেখ
হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের
বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট হয়।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর থামানোর আহŸান জানালেও সেজন্য শেখ
হাসিনাকেই দায়ী করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, “পলাতক অবস্থায় ভারতে
বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে
জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ভারতের শীর্ষ ক‚টনীতিককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই
বার্তা দেয়।
ঢাকায় ভারতের শীর্ষ ক‚টনীতিককে তলবের পাল্টায় একই রকম পদক্ষেপ নিয়ে মুহাম্মদ
ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর ক‚টনৈতিক ভাষায় জবাব দিয়েছে নয়া
দিল্লি।
ভারত বলেছে, “এটা খুবই দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ সরকারের নিয়মিত
বিবৃতিগুলোতে ভারতকে ক্রমাগত নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে; অভ্যন্তরীণ
সুশাসন প্রশ্নে তারা আমাদের দোষারোপ করে যাচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে
বাংলাদেশের এসব বিবৃতিই বিরাজমান নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্য দায়ী।”
শেখ হাসিনা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেগুলোর পেছনে ‘ভারতের কোনো ভ‚মিকা
নেই’ মন্তব্য করে দেশটির বলেছে এর সঙ্গে দিল্লিকে জড়ালে
‘ইতিবাচক’ কোনো ফল আসবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমার অবাক লাগে যে, ভারতের মতো একটি
গণতান্ত্রিক দেশে এমন নির্লজ্জের মতো ওখানকার মিডিয়া, কিছু সাংবাদিক
সেই এক ধরনের বয়ান তৈরি করছে, শেখ হাসিনা যেমনটি করেছেন… সেই
ফ্যাসিস্টদের পক্ষ অবলম্বন করে এই বয়ান তৈরি করছে। তাতে মনে হচ্ছে যে, অনেক
দিনের গুপ্তধন তারা যেটা সঞ্চয় করেছে সেই গুপ্তধন যেন হাতছাড়া হয়ে গেছে।”
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “তাদের (ভারতের) কেউ কেউ খাপছাড়া টাইপের কিছু
মানুষ, তারা বলছেন যে, বাংলাদেশ আর থাকবে না। পার্শ্ববর্তী একটি স্বাধীন দেশ
সেটা থাকবে না সেই কথাটা অ্যালাউ করছে কি করে ভারতের নীতিনির্ধারকরা?”
রিজভী বলেন, “আমাদেরও সবাইকে গণতান্ত্রিক শক্তির স্বপক্ষের লোকদেরকে সর্তক
পদক্ষেপ রাখতে হবে। কোনো নৈরাজ্যের কারণে কেউ যাতে কোনো সুযোগ না
নিতে পারে। এটাও মনে রাখতে হবে প্রতিবিপ্লব উঁকিঝুঁকি মারে সবসময়।
এই উঁকিঝুঁকি যাতে দিতে না পারে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ওপর
লেখা জিএম রাজিব হোসেনের ‘দ্রোহের গ্রাফিতি’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে
এই অনুষ্ঠান হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান
উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব
কাদের গনি চৌধুরী, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল
আহমেদ, সরগম পত্রিকার সম্পাদক কাজী রওনক হোসেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, লেখক জিএম রাজিব
হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’: সারাদেশে
যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু
এনএনবি : গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের
বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশে
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসানের পাঠানো এক
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে
একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“গতকাল রাতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় আজ
(শনিবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা
অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার
লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন
ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।