“ইসলাম প্রতিদিন”
রমজান মাসে রোজা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। তবে ফরজ রোজার পাশাপাশি ইসলামে সুন্নত ও নফল রোজারও গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সময় আমরা এই তিন ধরনের রোজার পার্থক্য স্পষ্টভাবে জানি না। তাই আজ আমরা ফরজ, সুন্নত ও নফল রোজার পার্থক্য, গুরুত্ব এবং বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
ফরজ রোজাঃ
রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। এটি প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মুসলিম নর-নারীর জন্য বাধ্যতামূলক। রমজানের রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন—
❝হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।❞ (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
ফরজ রোজার মূল বিধানঃ
রমজানের ৩০ দিন রোজা রাখা ফরজ।
শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করলে তাকে কাফফারা দিতে হবে (একটানা ৬০ দিন রোজা রাখা অথবা ৬০ জন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো)।
অসুস্থতা, গর্ভাবস্থা বা ভ্রমণের কারণে কেউ রোজা রাখতে না পারলে পরে কাজা আদায় করতে হবে।
ফরজ রোজা ছাড়া অন্য কোনো রোজা রাখার আগে ফরজ রোজাগুলোর কাজা করে নেওয়া জরুরি।
সুন্নত রোজাঃ
ফরজ রোজা ছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন কিছু বিশেষ দিনে রোজা রাখতেন, যেগুলোকে সুন্নত রোজা বলা হয়। সুন্নত রোজাগুলো পালন করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়, তবে এগুলো বাধ্যতামূলক নয়।
সুন্নত রোজার দিনসমূহঃ
১. আশুরার রোজা (১০ মহররম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “আশুরার দিনে রোজা রাখলে আগের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (মুসলিম)
৯ ও ১০ মহররম বা ১০ ও ১১ মহররম—এভাবে দু’দিন রোজা রাখা সুন্নত।
2. আরাফার দিনের রোজা (৯ জিলহজ):
যারা হজে যাননি, তাদের জন্য আরাফার দিনে রোজা রাখা সুন্নত।
এই রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আরাফার দিনে রোজা রাখা এক বছরের আগের ও পরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ।” (মুসলিম)
৩. সপ্তাহের বিশেষ দিনগুলোতে রোজাঃ
রাসুল (সা.) প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন এবং এটি উম্মতের জন্য সুন্নত হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
তিনি বলেছেন: “সোমবার ও বৃহস্পতিবারে আমলনামা আল্লাহর দরবারে তোলা হয়, তাই আমি চাই, যখন আমার আমলনামা তোলা হবে, তখন যেন আমি রোজাদার থাকি।” (তিরমিজি)
৪. শাবান মাসের রোজাঃ
রাসুল (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন।
তিনি বলেছেন: “শাবান মাস হলো রমজানের প্রস্তুতির মাস।” (নাসাঈ)
নফল রোজা:
নফল রোজা হল এমন রোজা, যা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি পালন করলে প্রচুর সওয়াব পাওয়া যায়।
নফল রোজার ফজিলতঃ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন নফল রোজা রাখে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে রাখবেন।” (বুখারি, মুসলিম)
শাওয়াল মাসে ৬টি নফল রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ“যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখবে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখলো।” (মুসলিম)
ফরজ, সুন্নত ও নফল রোজার মধ্যে পার্থক্যঃ
রমজানের ফরজ রোজা আমাদের জন্য অবশ্যই পালনীয়। পাশাপাশি সুন্নত ও নফল রোজা পালন করলে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। তাই শুধু রমজান মাসেই নয়, বরং সারা বছর বিভিন্ন সময়ে রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার গুরুত্ব অনুধাবন করে তা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।