ইসলাম প্রতিদিন | পর্ব : ০৭
রমজান হলো আত্মসংযম ও আত্মগঠনের মাস। এ সময় মানুষের প্রবৃত্তি (নফস) নিয়ন্ত্রণ করে তাকওয়ার পথে চলার অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন—
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
📖 (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩)
রমজানের মূল লক্ষ্যই হলো আত্মসংযম শেখা ও উত্তম চরিত্র গঠন করা।
নফসের নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা
নফস মানুষকে পাপের পথে প্ররোচিত করে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন—
“নিশ্চয়ই নফস মন্দের প্রতি প্ররোচিত করে, যদি না আমার রব দয়া করেন।”
📖 (সূরা يوسف: ৫৩)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করে। আর অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে দয়ার আশা করে।”
📖 (তিরমিজি: ২৪৫৯)
রমজানে নফসের নিয়ন্ত্রণ ও চরিত্র গঠনের কিছু উপায়
১️. সবর (ধৈর্য) ও আত্মসংযম চর্চা
রোজা ধৈর্যের শিক্ষা দেয়, যা নফস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
রাসূল (সা.) বলেন— “রোজা ধৈর্যের অর্ধেক।” (ইবনে মাজাহ: ১৭৪৫)
২️. জিহ্বা ও রাগের নিয়ন্ত্রণ
রোজাদারের উচিত মিথ্যা, গিবত ও কটূক্তি থেকে বিরত থাকা।
নবী (সা.) বলেন— “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অসৎ কাজ পরিত্যাগ করলো না, তার না খেয়ে থাকার কোনো মূল্য আল্লাহর কাছে নেই।” (বুখারি: ১৯০৩)
৩️. তাহাজ্জুদ ও দোয়ার অভ্যাস
রাতের নফল ইবাদত নফস পরিশুদ্ধ করে এবং আত্মগঠনে সাহায্য করে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “নিশ্চয়ই রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।” (তিরমিজি: ৩৫৯৮)
৪️. কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির
কুরআন নফসকে পরিশুদ্ধ করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
আল্লাহ বলেন— “নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে হৃদয় প্রশান্ত হয়।” (সূরা রা’দ: ২৮)
৫️. সদকা ও মানবসেবা
রাসূল (সা.) রমজানে সবচেয়ে বেশি দানশীল হতেন। সদকা নফসের লোভ ও স্বার্থপরতা দূর করে।
রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে আমরা যদি নফসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, তবে সারা বছরই ভালো চরিত্র ধরে রাখা সম্ভব হবে। তাই আমাদের উচিত রমজানের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা, যেন সত্যিকারের তাকওয়াবান ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি।
আল্লাহ আমাদের নফস নিয়ন্ত্রণ ও উত্তম চরিত্র গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।