ইসলাম প্রতিদিন | পর্বঃ ১৩
রমজান কেবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের জন্যই নয়, বরং শিশুদের মধ্যেও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই বিধান সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। যদিও শিশুদের জন্য রোজা ফরজ নয়, তবুও তারা যেন ধীরে ধীরে রোজার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে, সে বিষয়ে পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিশুদের রোজার প্রতি আগ্রহী করার কিছু দিক তুলে ধরা হলো।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিশুদের রোজার শিক্ষা
১. রোজার শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই দেওয়া উচিত
কুরআনে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।” (সূরা আত-তাহরীম: ৬)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পরিবারের দায়িত্ব হলো শিশুদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া, যাতে তারা ভবিষ্যতে দ্বীনের ওপর দৃঢ়ভাবে চলতে পারে।
২. শিশুদের রোজার প্রতি উৎসাহিত করা
রাসুল (সা.) বলেন:
“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও এবং দশ বছর বয়সে তারা তা না মানলে শাসন করো।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ফরজ ইবাদতের প্রতি শিশুদের আগ্রহী করার দায়িত্ব পরিবারের। ঠিক তেমনি, রোজার ক্ষেত্রেও ধাপে ধাপে তাদের প্রস্তুত করা উচিত।
শিশুদের রোজার প্রতি আগ্রহী করার উপায়ঃ
১. ছোটদের জন্য হাফ-রোজা বা আংশিক রোজার ব্যবস্থা
শিশুরা একবারে পুরো রোজা রাখতে না পারলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বা দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত রোজার অভ্যাস করানো যেতে পারে।
২. ইফতার ও সেহরির আয়োজন শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করা
রমজানের বিশেষ মুহূর্তগুলোতে শিশুদের অংশগ্রহণ করানো উচিত, যেমন— বিশেষ ইফতার আয়োজন, পরিবারের সঙ্গে দোয়া পাঠ করা, রমজানের গল্প শোনানো ইত্যাদি।
৩. পুরস্কার ও প্রশংসার মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়া
শিশুরা যখন রোজার চেষ্টা করে, তখন তাদের জন্য ছোটখাটো উপহার বা প্রশংসা করা গেলে তারা আগ্রহী হয়।
৪. রমজানের তাৎপর্য সম্পর্কে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা
রোজার শারীরিক ও আত্মিক উপকারিতা সম্পর্কে সহজ ভাষায় তাদের বোঝানো যেতে পারে, যাতে তারা আত্মিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়।
৫. শিশুদের বন্ধুদের সঙ্গে রোজা রাখা ও ইবাদত করতে উদ্বুদ্ধ করা
পরিবারের বাইরে তাদের বন্ধুদেরও এতে যুক্ত করা গেলে তারা আরও আনন্দের সঙ্গে রোজার চর্চা করতে পারবে।
শিশুরা ইসলামী শিক্ষা ও ইবাদত পালনের অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলে। তাই, রমজান মাসে শিশুদের ধীরে ধীরে রোজার প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং তাদের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা অভিভাবকদের দায়িত্ব। রাসুল (সা.) নিজেও শিশুদের ইসলামি শিক্ষা দিতে উৎসাহিত করতেন। ধৈর্য ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের রোজার প্রতি আকৃষ্ট করা গেলে ভবিষ্যতে তারা একনিষ্ঠ মুসলমান হয়ে গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।