ইসলাম প্রতিদিন | পর্ব: ৩
রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ: ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ
রমজান মাসে রোজা রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদত। রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। তবে অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত কিছু কারণে রোজা ভেঙে যেতে পারে। আজ আমরা আলোচনা করবো পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে।
ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গের কারণসমূহঃ
কিছু কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করলে রোজা সম্পূর্ণ ভঙ্গ হয়ে যায় এবং তার বদলে কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হয়।
০১: ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করাঃ
আল্লাহ বলেন, “এখন তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা নির্ধারিত করেছেন তা অন্বেষণ করো এবং পানাহার করো যতক্ষণ না ফজরের শুভ্র রেখা কৃষ্ণ রেখা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।” (সূরা বাকারা: ১৮৭)
তাই দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা রোজা ভঙ্গ করে।
০২: ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটানোঃ
রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সহবাস করবে, তার উপর কাফফারা আদায় করা জরুরি।” (বুখারি: ১৯৩৬)
এর কাফফারা হলো একাধারে ৬০ দিন রোজা রাখা বা ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়ানো।
০৩: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করাঃ
রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তার রোজা ভেঙে যায়।” (আবু দাউদ: ২৩৮০)
অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ
কিছু কারণ অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে তার জন্য কাফফারা লাগবে না, শুধু কাজা করতে হবে।
০১: অনিচ্ছাকৃতভাবে খেয়ে ফেলা বা পানি পান করা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যদি কেউ ভুলক্রমে কিছু খায় বা পান করে, তবে সে যেন রোজা সম্পন্ন করে; কারণ, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য রিজিক।” (বুখারি: ১৯৩৩, মুসলিম: ১১৫৫)
তবে ভুল বুঝতে পারার পরপরই খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
০২️: অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে:
রাসূল (সা.) বলেন, “যদি কারো অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি আসে, তাহলে তার রোজা ভাঙবে না।” (তিরমিজি: ৭২০)
০৩️: নাক, কান বা মুখ দিয়ে পানি প্রবেশ করলে:
যদি ভুলবশত নাকে পানি টেনে ফেলা হয় বা ওযুর সময় গলায় পানি চলে যায়, তবে রোজা ভাঙবে না।
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে তা করলে রোজা ভেঙে যাবে
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না
✔ কুলি করা বা টুথপেস্ট ব্যবহার: তবে সাবধান থাকতে হবে যেন কিছু না গিলে ফেলি।
✔ রক্ত নেয়া বা ইনজেকশন দেয়া: এতে শরীরের খাদ্য প্রবেশ করে না বলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
✔ চোখের ড্রপ বা কান পরিষ্কার করা: এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
✔ স্বপ্নদোষ হলে: এটি স্বাভাবিক, রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মসংযম ও তাকওয়া অর্জন। তাই আমাদের উচিত রোজার সময় সতর্ক থাকা, যাতে অনিচ্ছাকৃত ভুলেও রোজা ভেঙে না যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজা পালনের তৌফিক দিন, আমিন।
– কুষ্টিয়া প্রতিদিন