ইসলাম প্রতিদিন | পর্বঃ ০৮
পবিত্র মাহে রমজান মানবজীবনের পরিশুদ্ধির মাস। এই মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ, যা আত্মশুদ্ধি ও শারীরিক সুস্থতার এক অনন্য উপায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা রোজার মাধ্যমে বান্দাকে তাকওয়ার পথে পরিচালিত করেন এবং শারীরিক সুস্থতার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম করে তুলেছেন।
রোজার আত্মিক উপকারিতা
১. তাকওয়া অর্জন:
আল্লাহ বলেন—
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”
(সূরা বাকারা: ১৮৩)
রোজা মানুষকে ধৈর্যশীল ও সংযমী করে তোলে। পানাহার ও কু-প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজাদার আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং নিজেকে গুনাহ থেকে রক্ষা করতে শিখে।
২. আত্মসংযম ও চরিত্র গঠন:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“রোজা ঢালস্বরূপ। কেউ যদি রোজা রাখে, তবে সে অশ্লীল কথা বলবে না এবং মূর্খের মতো আচরণ করবে না। কেউ যদি তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায় বা গালিগালাজ করে, তবে সে বলবে, আমি রোজাদার।”
(সহিহ বুখারি: ১৮৯৪)
রোজা মানুষকে ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়, যা চারিত্রিক উন্নতির অন্যতম মাধ্যম।
৩. ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা বৃদ্ধি:
রোজা শুধু ক্ষুধা-পিপাসার কষ্ট সহ্য করা নয়; বরং এটি ধৈর্যচর্চার এক মহান প্রশিক্ষণ। একই সঙ্গে ক্ষুধার্ত ও দুঃস্থ মানুষের কষ্ট অনুধাবন করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুযোগ।
রোজার শারীরিক উপকারিতা
ইসলাম আমাদের আত্মিক পরিশুদ্ধির পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে যে রোজা সুস্থতার এক কার্যকর পদ্ধতি।
১. হজম প্রক্রিয়ার বিশ্রাম:
সারাদিন না খাওয়ার ফলে পরিপাকতন্ত্রের ওপর চাপ কমে এবং এটি কার্যকারিতা বজায় রাখার সুযোগ পায়।
২. মেটাবলিজমের উন্নতি:
রোজা শরীরের বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে, যা অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।
৩. শরীর থেকে টক্সিন দূরীকরণ:
সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরের জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে যায়, যা দেহকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।
৪. মানসিক প্রশান্তি:
রোজা রাখার সময় শরীরে সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং দুশ্চিন্তা কমায়।
রোজা কেবল ধর্মীয় বিধান নয়; বরং এটি আত্মশুদ্ধি ও শারীরিক সুস্থতার এক পরিপূর্ণ ব্যবস্থা। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন এবং সুস্থ জীবন লাভের তাওফিক দান করুন।
“তোমরা রোজা রাখো, সুস্থ থাকবে।” (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৫৪৮)
কুষ্টিয়া প্রতিদিন