ইসলাম প্রতিদিন, পর্বঃ ১৬
ইতিকাফ শব্দের অর্থ হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। ইসলামে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। বিশেষ করে, পবিত্র রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া (যদি কেউ করে তবে বাকিদের জন্য তা ফরজ নয়, কিন্তু কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবে)।
কোরআনে ইতিকাফের উল্লেখ
আল্লাহ তাআলা ইতিকাফ সম্পর্কে কোরআনে বলেছেন:
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
“এবং তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো না।”
— (সুরা আল-বাকারাহ: ১৮৭)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইতিকাফ মসজিদে করতে হয় এবং এ সময়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা জরুরি।
হাদিসে ইতিকাফের গুরুত্ব
১. রাসূলুল্লাহ (সা.) আজীবন ইতিকাফ করতেন
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
“রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন, মৃত্যুর পূর্ববর্তী বছরে তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন।”
— (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০২৬)
২. ইতিকাফ নফসের পরিশুদ্ধির মাধ্যম
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দকের দূরত্ব সৃষ্টি করবেন।”
— (মুসনাদ আহমাদ: ৭৪৫০, তাবারানি: ৪০৮৭)
৩. ইতিকাফকারী ব্যক্তি গুনাহ থেকে নিরাপদ
ইবনে মাজাহ শরিফের এক হাদিসে আছে,
“যে ব্যক্তি ইতিকাফে থাকে, সে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, আর সে ব্যক্তিকে সে সমস্ত নেক আমল প্রদান করা হয় যা সে বাইরে থেকে করতো।”
— (ইবনে মাজাহ: ১৭৮১)
ইতিকাফের উদ্দেশ্য ও উপকারিতাঃ
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা। একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা ও দুনিয়াবি ব্যস্ততা থেকে মুক্ত থাকা। নিজের আমলকে পরিশুদ্ধ করা ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ পাওয়া। লাইলাতুল কদর লাভের সুযোগ তৈরি হওয়া।
ইতিকাফের বিধান ও নিয়মঃ
ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশ করে নিয়ত করতে হবে। ইতিকাফ অবস্থায় ব্যক্তিকে মসজিদের ভেতরে থাকতে হবে, জরুরি প্রয়োজনে (যেমন, টয়লেট ব্যবহার) বাইরে যাওয়া যাবে। অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ ও দোয়া করা উচিত। অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বা সময় অপচয় করা বাঞ্ছনীয় নয়।
ইতিকাফ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা রাসূলুল্লাহ (সা.) সবসময় পালন করতেন। এটি আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ এনে দেয়। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইতিকাফের গুরুত্ব বোঝা এবং সময়-সুযোগ মতো এই সুন্নত আমল পালন করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন, আমিন!