অনলাইন ডেক্স : অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে (আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে জানুয়ারি
২০২৫ সাল) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন এক হাজার ৪০৪ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার
মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের (আগস্ট ২০২৩ সাল থেকে জানুয়ারি
২০২৪ সাল) তুলনায় বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। প্রবাসী আয়ের এমন বৃদ্ধিতে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতন থামানো সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ইতিবাচকভাবে
উন্নতির দিকে এগিয়ে গেছে রিজার্ভ।
গত জুলাই শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী,
বিপিএম৬ হিসেবে দেশে রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৩৯ কোটি ডলার। মোট
রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৫৮২ কোটি ডলার। সেখান থেকে কমে গত সেপ্টেম্বরে
বিপিএম৬ হিসেবে দেশে রিজার্ভ হয়েছিল এক হাজার ৯৮৬ কোটি মার্কিন
ডলার। মোট রিজার্ভ হয়েছিল দুই হাজার ৪৮৬ কোটি ডলার। পরের মাসে রিজার্ভ
পতন কমে আসে। পরবর্তীতে রিজার্ভ বাড়তে থাকে। এরই ধারায় গত ডিসেম্বরে
বিপিএম৬ হিসেবে দেশে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল দুই হাজার ১৩২ কোটি
মার্কিন ডলার। মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৬২১ কোটি ডলার। এশিয়ান ক্লিয়ারিং
ইউনিয়নের (আকু) বিলের কারণে যদিও রিজার্ভ কিছুটা কমে এসেছে। তারপরও
গত ৬ ফেব্রæয়ারি বিপিএম৬ হিসেবে দেশে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০
কোটি ডলারে। আর মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৫৪০ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় হলো দেশের ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। এই আয়ের
বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ বা কোনো দায় পরিশোধ করতে হয় না।
রপ্তানি আয়ে ডলার এলে তা দিয়ে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ডলার ব্যয়
হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ডলারের দরকার হয়। তাই প্রবাসী আয় যত
বাড়বে দেশে ডলারের সংকট তত কমবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় দেশে প্রবাসী
আয় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে (আগস্ট থেকে জানুয়ারি)
প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ৪০৪ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
আগের অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময় (আগস্ট থেকে জানুয়ারি) প্রবাসী
আয় এসেছিল এক হাজার ৯৩ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এই সময়ের মধ্যে
প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩১০ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ২৮ দশমিক ৪১
শতাংশ।
গত অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪
লাখ ৫০ ডলার। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২২২
কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে গত আগস্টে প্রবাসী আয়
বেড়েছিল ৬২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বা ৩৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।
আগের অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০
ডলার। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪০ কোটি ৪১ লাখ
১০ হাজার ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ১০৬
কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার বা ৮০ দশমিক ১৭ শতাংশ।গত অর্থবছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার
ডলার। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০
হাজার ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে গত অক্টোবরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ৪২
কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার
ডলার। চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯০
হাজার ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে গত অক্টোবরে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ২৬
কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
এ ছাড়া গত অর্থবছরের ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ১২ লাখ
৬০ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৬৩
কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে গত ডিসেম্বরে প্রবাসী
আয় বেড়েছিল ৬৪ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার ডলার বা ৩২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
আগের অর্থবছরের জানুয়ারি প্রবাসী আয় এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০
হাজার ডলার। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছে ২১৮ কোটি
৫২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ সময়ের ব্যবধানে গত জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়
বেড়েছে সাত কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা তিন দশমিক ৪১ শতাংশ।
প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও
সাবেক মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতা
বাড়ানোর কারণে হুন্ডি বা অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা কমেছে।
এতে এখন প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে দেশের রিজার্ভ
বেড়েছে। এখন মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৫৩১ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
রিজার্ভের পতন থামানোর বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি জানিয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিভিন্ন প্রচেষ্টায়
অর্থপাচার অনেকটাই রোধ করা গেছে। পাশাপাশি প্রবাসী আয় বাড়ার কারণে
আন্তঃব্যাংকে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। যার ফলে রিজার্ভ বাড়ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম
মুদ্রানীতি ঘোষণা কাল
এনএনবি : মূল্যস্ফীতি কমানোর মত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামীকাল সোমবার (১০
ফেব্রæয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের। দেশকে মধ্যম আয়ের ফাঁদে ফেলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি
বাড়াতে ২০২০ সালে ৬-৯ সুদ হার বাস্তবায়ন করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। আর
এই সুযোগে একদিকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে অর্থ লোপাট হয়েছে, অন্যদিকে
আমানতে কম লাভে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়েছে অনেক গ্রাহক। এতে
ব্যাংকের টাকা কমে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি।
অপরদিকে বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান ধরে রেখে ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো
উন্নয়নের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে পতিত সরকার এবং তার
সহযোগীরা। ফলে তলানিতে নেমেছে রিজার্ভ, বেড়েছে আমদানি খরচ। আর
মূল্যস্ফীতি বেড়ে চাপ বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ

আপনার মতামত লিখুন