ইসলাম প্রতিদিন | পর্ব: ০৬
রমজান মাসে সেহরি ও ইফতার রোজার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেহরি ও ইফতার শুধু আহারের সময় নয়, বরং এর সাথে রয়েছে অনেক বরকত, সুন্নত ও ফজিলত। কুরআন ও হাদিসের আলোকে এগুলো সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হলো।
১. সেহরির গুরুত্ব ও বরকত
(ক) সেহরি খাওয়া সুন্নত
সেহরি খাওয়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে—
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“সেহরি খাও, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে।”
(সহিহ বুখারি: ১৯২৩, সহিহ মুসলিম: ১০৯৫)
(খ) সেহরির খাবারে বরকত রয়েছে
সেহরির খাবার শুধু শরীরের জন্য উপকারী নয়, বরং এটি আত্মার জন্যও বরকতময়।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“আমাদের (মুসলমানদের) সেহরি খাওয়ার মধ্যে ইহুদী-নাসারাদের সাথে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।”
(সহিহ মুসলিম: ১০৯৬)
(গ) সেহরির সময় দোয়া কবুল হয়
সেহরির শেষ সময় তাহাজ্জুদ ও দোয়ার শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। এ সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন।
আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“আর তারা শেষ রাতে (ঘুম থেকে উঠে) ক্ষমা প্রার্থনা করে।”
(সূরা আয-যারিয়াত: ১৮)
(ঘ) দেরি করে সেহরি খাওয়া সুন্নত
সেহরি বিলম্বে খাওয়া উত্তম, যতক্ষণ না ফজরের সময় হয়।
হাদিসে এসেছে:
“জৈদ ইবনু সাবিত (রা.) বলেন, আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খেয়েছি, তারপর তিনি নামাজে দাঁড়িয়েছেন। আমি বললাম, আজান ও সেহরির মধ্যে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াতের সময়ের সমান।”
(সহিহ বুখারি: ১৯২১, সহিহ মুসলিম: ১০৯৭)
২. ইফতারের সুন্নত ও ফজিলত
(ক) দ্রুত ইফতার করা সুন্নত
মাগরিবের আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নত। দেরি না করে দ্রুত ইফতার করা নবীজির আদর্শ।
হাদিসে এসেছে:
“মানুষ সবসময় কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা ইফতারে তাড়াতাড়ি করে।”
(সহিহ বুখারি: ১৯৫৭, সহিহ মুসলিম: ১০৯৮)
(খ) ইফতার খেজুর বা পানি দিয়ে করা উত্তম
ইফতার করার জন্য খেজুর বা পানি ব্যবহার করা সুন্নত।
হাদিসে এসেছে:
“নবী (সা.) সালাত আদায়ের পূর্বে কিছু তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, তবে শুকনো খেজুর খেতেন। যদি তাও না পেতেন, তবে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।”
(সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৬)
(গ) ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়
ইফতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন দোয়া কবুল হয়।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“রোজাদারের জন্য ইফতারের সময় দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।”
(সুনানে ইবন মাজাহ: ১৭৫৩)
(ঘ) ইফতারের দোয়া পড়া সুন্নত
ইফতারের পর দোয়া পড়া সুন্নত।
হাদিসে এসেছে:
“যখন কোনো বান্দা ইফতার করে, তখন সে বলে:
اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت
(উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিজকিকা আফতরতু’),
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার জন্য আমি রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিকে ইফতার করলাম।”
(সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৮)
৩. সেহরি ও ইফতার: একটি পরিপূর্ণ ইবাদত
সেহরি ও ইফতার শুধু খাবার গ্রহণের সময় নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“তোমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)
রোজাদারের জন্য সেহরি ও ইফতার পালন করা মহান সুন্নত এবং এটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় আমল।
উপসংহার
সেহরি ও ইফতার শুধু রোজার অংশ নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। সঠিক নিয়মে সেহরি ও ইফতার করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করা যায়। তাই আমাদের উচিত সেহরি ও ইফতারে সুন্নত মেনে চলা এবং এই সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের সঠিক আদব ও সুন্নত মেনে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।