ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নাকের পলিপাস অপারেশন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১৭ বছরের কিশোর উৎস ভট্টাচার্য। শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে উপজেলার ইকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে এবং সেটি বন্ধের দাবি জানায়। উৎস ভট্টাচার্য কালীগঞ্জ উপজেলার খর্দরায় গ্রামের উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে উৎসের নাকে পলিপাস ধরা পড়ে। সে সময় চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, অন্তত ১৭ বছর পূর্ণ হলে অপারেশন করানো যাবে। চলতি বছর এসএসসি পাস করে কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয় উৎস। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) তাকে ইকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী রাজিবুল ইসলাম সন্ধ্যা ৭টায় অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও একাধিকবার সময় পরিবর্তন করে ভোর ৫টায় অপারেশন করেন। দীর্ঘ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার কক্ষে রাখার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উৎসকে বেডে দেওয়া হয়। তখন কিছুক্ষণ জ্ঞান ফিরলেও দ্রুতই সে আবার অচেতন হয়ে পড়ে। অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে উৎসকে যশোরে রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। উৎসের বাবা উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “সুস্থ ছেলেকে সামান্য নাকের অপারেশন করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম, অথচ মৃত অবস্থায় ফিরতে হলো! ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”
পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, ভুল চিকিৎসার কারণে উৎসের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, উৎসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এটি প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার কারণে সিজারিয়ানসহ একাধিক রোগী মারা গেছে।
জনরোষের মুখে শতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালটি ঘেরাও করে এবং স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানায়। এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের মালিক ইকরামুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। উৎসের অকাল মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।