ইসলাম প্রতিদিন
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা রমজানের প্রথম দশক শেষ করে মাগফিরাতের দশকে প্রবেশ করছি। মহান আল্লাহ রমজানকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন—প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের এবং শেষ দশক নাজাতের। প্রথম দশকটি মূলত আল্লাহর রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগ। কোরআন ও হাদিসের আলোকে রহমতের এই দশক সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
রমজান: রহমতের মাস
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“রমজান মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সুরা বাকারা: ১৮৫)
এই মাসকে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে বরকতময় করেছেন এবং এ মাসে রহমতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
রহমতের দশকের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্যবর্তী অংশ মাগফিরাত এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য নির্ধারিত।” (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৮৮৭)
রমজানের প্রথম দশকে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অসীম দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। এই সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমত নাজিল করেন এবং দোয়া কবুল করেন।
রহমতের দশকে করণীয় আমল
রমজানের প্রথম দশক শুধু রোজা রাখার জন্য নয়, বরং আল্লাহর রহমত লাভের জন্য কিছু বিশেষ আমল করা উচিত।
১. অধিক পরিমাণে দোয়া করা
রাসুল (সা.) বলেছেন,
“আল্লাহর রহমত তাঁর বান্দাদের খুব কাছাকাছি থাকে। তাই তোমরা আল্লাহর রহমত কামনা করো।” (তিরমিজি)
এই সময় আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি:
اللَّهُمَّ ارْحَمْنَا بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইরহামনা বি রাহমাতিকা আল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাই’।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি সেই রহমত বর্ষণ কর, যা সমস্ত কিছুকে আচ্ছাদিত করেছে।
২. কোরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা
রমজান কোরআনের মাস, তাই এই মাসে বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত।
রাসুল (সা.) বলেছেন,
“কোরআন পাঠ করো, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তোমাদের জন্য সুপারিশকারী হবে।” (মুসলিম, ৮০৪)
৩. নামাজ ও ইবাদতে মনোযোগী হওয়া
এই দশকে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য আমাদের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ ও তারাবি আদায় করা।
৪. গরিব-দুঃখীদের প্রতি সদয় হওয়া
আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন।” (সুরা আ’রাফ: ১৫৬)
সুতরাং, গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা ও সাদাকাহ প্রদান করা উচিত।
উপসংহার
রমজানের রহমতের দশক আমাদের জন্য অপার সুযোগ। এই সময়ে আমরা যদি আল্লাহর রহমত অর্জনের চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের জন্য পরবর্তী দুই দশক আরও ফলপ্রসূ হবে। রহমতের এই সময়টিকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রহমতের দশকের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।