অনলাইন ডেক্সঃ ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আজ বুধবার এক ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ভারত সীমান্তপারের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে প্রত্যাঘাত করেছে। তাঁর ভাষায়, এই পদক্ষেপ ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ এবং পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পুনরাবৃত্তি রোধের অংশ হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছে। বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারতের এ প্রতিক্রিয়া ছিল “পরিমিত, সমানুপাতিক ও দায়িত্বশীল”— যা বিস্তৃত হয়নি এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী কাঠামো ধ্বংস করা এবং সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকানো।
তিনি আরও বলেন, পেহেলগামের হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গত ২৫ এপ্রিল যে বিবৃতি দিয়েছিল, ভারতের এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সেই প্রেক্ষাপটেই দেখতে হবে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনা ও বিমানবাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত সময়ে ভারতের বিশেষ বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের ওপাশে মোট ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করেছে। সোফিয়া ও ব্যোমিকা জানান, এই অভিযান কোনো পাকিস্তানি সেনাঘাঁটি কিংবা বেসামরিক স্থাপনার বিরুদ্ধে ছিল না। অত্যন্ত নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, প্রথম আঘাত হানা হয় ভাওয়ালপুরের মারকাজ শুবহান আল্লাহ্ ঘাঁটিতে, যা জইশ-ই-মহম্মদের একটি প্রশিক্ষণ শিবির। এছাড়া বিলাল মসজিদে অবস্থিত লস্কর-ই-তাইয়েবার প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও কোটলিতে তাদের একটি ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু ছিল। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাশাপাশি ভারতের বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও অভিযান চালিয়েছে বলে জানান তাঁরা। শিয়ালকোটের সার্জাল ক্যাম্প (আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৬ কিলোমিটার ভেতরে), হিজবুলের মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প এবং লাহোরের নিকটে মুরিদকের মারকাজ তৈয়্যেবা আক্রমণের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ঘাঁটিগুলো থেকেই পেহেলগামের হামলাকারীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে ভারত দাবি করেছে। উল্লেখ্য, ২৬/১১ মুম্বাই হামলার অভিযুক্ত আজমল কাসভের প্রশিক্ষণও হয়েছিল মুরিদকের ওই ক্যাম্পে।
বিক্রম মিশ্রি জানান, পেহেলগামে হামলার পেছনে ছিল জম্মু–কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা, অর্থনৈতিক ও পর্যটন খাতকে ধ্বংস করা এবং সারা ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য। হামলার দায় স্বীকার করা টিআরএফ নামক সংগঠনটি জাতিসংঘে নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি শাখা বলে উল্লেখ করেন তিনি।