নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুষ্টিয়া সহ দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলোতে আবারো জেগে বসেছে চরমপন্থী আতঙ্ক। একই দিনে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ ১৭ বছর পরে আবার সেই পুরনো আতঙ্ক চরমপন্থী। চরমপন্থীদের আস্ফালনে ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া গড়াই ব্রিজের বালিরঘাটে একদল চরমপন্থী প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে ডাকাতি করে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। বালিরঘাটের ইজারাদার সহ কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়ে অস্ত্রের মুখে। শুক্রবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়ার শেষ সীমান্তে ঝিনাইদহ জেলার শুরুতে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে চরমপন্থীরা। নিহতরা হলেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের পুর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা হানিফ, তার শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম। হত্যার পর সাংবাদিকদের কাছে খুদে বার্তা দিয়ে এই হত্যার দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর পক্ষে দলের শীর্ষ নেতা কালু। একই রাতে ভেড়ামারা বালি ঘাটে ব্যাপক গোলাগুলি করে চরমপন্থীরা। ওই রাতেই কুষ্টিয়ার মিরপুরে একাধিক দোকানে গন ডাকাতি হয়। এ সকল ঘটনায় নতুন করে আবার চরমপন্থীদের উত্থানের বিষয় নিয়ে ভাবছে প্রশাসন সহ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের পর চরমপন্থীদের উপদ্রব বেড়ে যায় কুষ্টিয়া সহ দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলায়। গণবাহিনী গণমুক্তিফৌজ,জনযুদ্ধ, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি সহ অসংখ্য চরমপন্থী সংগঠনের আবির্ভাব হয় দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলায়। কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে গণমুক্তি ফৌজ ও জাসদ গণবাহিনী। ২০০৯ সালে তৎকালীন গণবাহিনী নেতা ওবায়দুল ওরফে লাল তিনজনকে জবাই করে তাদের মস্তক রেখে যায় গণপূর্ত বিভাগের গেটে। মস্তকের সাথে রেখে যায় চিরকুট। কয়েকদিনের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গেটে আরেকজন গণমুক্তি ফৌজ ক্যাডারের মস্তক রেখে যায় গণবাহিনী। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও শত শত কোটি টাকার টেন্ডারকে কেন্দ্র করে এ সকল হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। সূত্র বলছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলে চরমপন্থীদের ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতারা । চরমপন্থীদের গুলিতে নিহত হয় কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন বাচ্চু। ২০০৯ সালের ২২ শে জুন এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় কয়া হাতির সাঁকো নামক স্থানে। ১৫ই আগস্ট ভেড়ামারায় একটি কাঙ্গালী ভোজ অনুষ্ঠানে ব্রাশ ফায়ারে নিহত হয় ভেড়ামারা আওয়ামী লীগের নেতা মেহেরুল ইসলাম ও তার বন্ধু বান্দা ফাতাহ মোহন। এ সকল হত্যাকাণ্ডের সময় চরমপন্থীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মাহবুবুল আলম হানিফের নির্দেশে চরমপন্থীদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামীলীগের মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠা নেতাদের মৃত্যুর পর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নেতাদের মৃত্যুর পর শুরু হয় সন্ত্রাস দমন অভিযান। র্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিপি আসেন কুষ্টিয়ায়, ঘোষণা দেন চরমপন্থী নিধনের। একের পর এক প্রাণ হারায় গণমুক্তি ফৌজ ক্যাডাররা। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গণমুক্তি ফৌজের সকলে নিহত হয়। এরপর গণবাহিনী পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি সহ সকল চরমপন্থী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুলি করে মারতে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে কুষ্টিয়ায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের প্রধান আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপন। কুষ্টিয়ার খোকসায় নিহত হন দাদা তপনের আপন ছোট ভাই আকাশ ও চরমপন্থী নেতা টিক্কা। লাগাতার ক্রসফায়ারের মুখে চরমপন্থীরা পালিয়ে আশ্রয় নেয় ভারত সহ বিভিন্ন দেশে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে টেন্ডারবাজী সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চরমপন্থীদের প্রভাব থাকলেও হত্যাকান্ড নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। সম্প্রতি আবার গোলাগুলি হত্যাকাণ্ড এইসব নিয়ে নতুন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার কুষ্টিয়ায় না থাকার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।